জাপানের ক্ষমতায় কেন বদল, কে হবেন প্রধানমন্ত্রী
আশিক মিডিয়া ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩০ পিএম
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। ছবি: রয়টার্স
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে এক দফা দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও তৎপরবর্তী পুনর্গঠণ প্রক্রিয়ার দিকেই সবার মনোযোগ। এর মধ্যেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ সরে যাওয়ার ঘোষণা কিছুটা আড়ালেই পড়ে গেল। অথচ জাপানের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন অকস্মাৎ ঘোষণা আগ্রহ তৈরির জন্য যথেষ্ট। প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, কী হলো জাপানে?
বুধবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ঘোষণা দেন, আগামী মাসে তিনি পদত্যাগ করবেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসা কিশিদা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তার ঘাটতিতে ভুগছিলেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) এই নেতা বেশ কিছু কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষত কোরিয়াভিত্তিক ইউনিফিকেশন চার্চের সাথে এলডিপির সম্পর্ক, গত নভেম্বরে ওঠা রাজনৈতিক তহবিল নিয়ে বিতর্ক এবং ২০২২ সালের জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যাকাণ্ড তাঁকে নিয়ে সমালোচনার পালে হাওয়া দেয়।
কিশিদা এসব বিতর্কের মুখে চুপ করে ছিলেন না। অনেকটা কঠোর শাসকের মতোই নিজের বিরোধীদের দমন করেছেন তিনি। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীলদের তো বটেই নিজ দলের মধ্যে থাকা বিরোধীদেরও দমন করেছেন। তাঁর চাপে চার মন্ত্রী পদত্যাগে বাধ্য হন। একই সময়ে আইনসভার এলডিপির ৮০ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে কিশিদাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে দেশটির সরকারি আইনজীবীরা প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ও এলডিপির সাত জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে চাননি। কারণ হিসেবে বলা হয়, যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মাত্র তিনমাস আগেই কিশিদা ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি সরে দাঁড়াবেন না। বরং দুর্নীতি‑বিরোধী অভিযান ও রাজনৈতিক সংস্কার চালাবেন। এরই অংশ হিসেবে গত জুনে জাপানের আইনসভা ডায়েটে রাজনৈতিক তহবিল নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি প্রস্তাব আনে এলডিপি। তবে বিরোধীরা এই উদ্যোগকেও ‘যথেষ্ট নয়’ বলে উড়িয়ে দেয়। এর সাথে যুক্ত হয় গত মাসে দেশটি মেরিটাইম সেলফ‑ডিফেন্স ফোর্সের প্রধান নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য বিষয়ক এক অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন, যা কিশিদা সরকারকে আরও বিপদে ফেলে।
দ্য কনভারসেশনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যাবতীয় বিষয়ের প্রভাব পড়ে কিশিদার জনপ্রিয়তায়। জুলাইয়ের শেষে হওয়া এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশই আগামী সেপ্টেম্বরে এলডিপির নেতৃত্বের নির্বাচনের পর কিশিদাকে দলটির প্রধান হিসেবে দেখতে চান না। আর আগামী মাসেই ডায়েটে থাকা এলডিপি সদস্যদের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে এই জনমত জরিপ ও আসন্ন ভোট–দুই মিলিয়ে কিশিদা নিজের থেকে যাওয়ার পক্ষে বড় কোনো সমর্থন পাননি। এরই জেরে পদত্যাগের ঘোষণা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
কিশিদা তো প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাচ্ছেন, কিন্তু কে হবেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত? এরই মধ্যে এলডিপির মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেখা মিলছে। দ্য কনভারসেশন জানায়, এ তালিকায় আছেন শিগেরু ইশিবা, তোশিমিতসু মোতেগি ও তারো কোনো। এর মধ্যে দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে আছেন শিগেরু ইশিবা। বর্তমান এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এলডিপির মহাসচিবের পদে আছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। সাথে আছে আরেক প্রভাবশালী নেতা ইয়োশিহিদে সোগার সমর্থন। ইশিবা এরই মধ্যে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছেন।
তালিকায় থাকা তোশিমিতসু মোতেগি ও তারো কোনো রয়েছেন আলোচনায়। এর মধ্যে তারো কোনো এলডিপির নেতৃত্বের জন্য কিশিদার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে লড়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ডিজিটালমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। দুজনের কেউই অবশ্য এখনো প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। আলোচনায় রয়েছে অর্থনৈতিকা নিরাপত্তা মন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া। তাঁদের দুজনের কেউ প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হলে জাপান পাবে তাদের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন